বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট।
রোবার এ সংক্রান্ত একটি রিট মামলার শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে।
আদালত বলেছে, “ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে যারা প্রাণ হারিয়েছেন এবং যারা আহত হয়েছেন তারা সাধারণ মানুষ। ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার যাতে ক্ষতিপূরণ পায় সেজন্য আমরা আদেশ দিতে চেয়েছিলাম।
“কিন্তু রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই দিন কোনো আদেশ আমরা দেইনি। তিনি সরকারকে আদালতের এই মনোভাবের বিষয়টি জানাবেন বলেছিলেন। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি। প্ল্যাকার্ড নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিপূরণের জন্য রাজপথে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করছে। এটা সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে না।”
গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনে ৭১ জন নিহত এবং অনেকে আহত হন। এই আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যরা গত শুক্রবার প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানান।
এর প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নিয়ে এই মনোভাব জানাল উচ্চ আদালত।
অগ্নিকাণ্ডের পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক রিট আবেদনের শুনানিতে আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, যারা অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন তাদের এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
তখন আদালত বলেছিল, “এটা পর্যাপ্ত নয়। আমরা চাচ্ছি তাদেরকে যেন ৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।”
অ্যাটর্নি জেনারেল তখন বলেছিলেন, “এভাবে আদেশ দিলে যে কোনো ঘটনায় সবাই আদালতে ছুটে আসবে। আমি সরকারকে আদালতের এই মনোভাব জানাব।”
কিন্তু এই সময়ের মধ্যে আদালতে ঝুলে থাকা আদেশের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় রোববার এ সংক্রান্ত আরেকটি রিটের শুনানিতে উষ্মা প্রকাশ করল হাই কোর্ট।
আদালত বলেছে, “অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা কার্যকরের দায়িত্ব সরকারি সংস্থাগুলোর। পুরান ঢাকার ভবনগুলো ভেঙে নতুন করে তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে গণপূর্তমন্ত্রী বলেছেন। এটা ভালো দিক।”
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আবেদনের পক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না শুনানি করেন। তার সঙ্গে ছিলেন সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার পরে সাংবাদিকদের বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে আদালতের মনোভাব সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। সেখানে এখন বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।”
এদিকে রিটের শুনানি শেষে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রযোজ্য বিদ্যমান আইন, নীতিমালা প্রয়োগের ব্যর্থতা প্রশ্নে রুল জারি করেছে।
কারখানাসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অগ্নিকাণ্ডে মানুষের প্রাণহানি বা আকস্কিক মৃত্যুর জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব সিটি করপোরেশনের বিদ্যমান অধ্যাদেশ, নগর উন্নয়ন, ইমারত নির্মাণ, বিস্ফোরক দ্রব্য, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন, শ্রম আইন ও জাতীয় ভবন কোডসহ অন্যান্য প্রযোজ্য আইন, নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও সেগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়নে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতাকে কেন দায়ী করা হবে না, তা জানতে চেয়েছে আদালত।
একই সঙ্গে বিদ্যমান এসব আইন, নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়নে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
এছাড়াও দেশের সব শহরে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে এবং শহরাঞ্চলের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, অননুমোদিত স্থাপনা বা ভবন, গুদাম, শিল্প কারখানার বিষয়ে একটি পরিকল্পিত যথাযথ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিবালক, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।